দীপঙ্কর গুহ ( এডিটর ইন চিফ) :
কত বিতর্ক! যতো কাণ্ড যেন এই ইডেনে। আঙুল উঠতে থাকছে ইডেন পিচ কিউরেটর সুজন মুখোপাধ্যায়ের দিকে। কেন উনি, এই মাঠের ” হোম টিম” কেকেআরের পছন্দ মাফিক উইকেট দিচ্ছেন না? পছন্দ মাফিক উইকেট তো হোম টিমের পাওয়া উচিত। এমন দাবি তুলেছেন টিভি বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে বসা ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ থেকে প্রাক্তন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটাররাও।
আমরা এই কদিন এমনসব বির্তক দেখে যাচ্ছিলাম। এরপর সত্যিটা কি খোঁজ করতে নামি। বিসিসিআই এর চিফ কিউরেটর আশীষ ভৌমিকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। অসমের এই অভিজ্ঞ কিউরেটরের সরাসরি দেখভাল করা ২২ গজে খেলে কেকেআর দ্বিতীয় ম্যাচে জয় পায় গুয়াহাটিতে। প্রথম ম্যাচে ইডেনে মেলে পরাজয়। আর এতেই শুরু হয়ে যায় জোরদার বিতর্ক।
এমন ম্যাচে জয়, আর কেকেআর দলের নেতা অজিঙ্কা রাহানের একটু ঘোরানো মন্তব্য বিতর্কের জন্ম দেয়। রাহানে বলেছিলেন, ইডেনের উইকেট থেকে দলের স্পিনাররা একটু সুবিধা পেলে ভালো হত।
এই বাড়তি সুবিধা কি হোম টিমকে দেওয়া যায়? বোর্ডের কিউরেটর প্রধানের দাবি, টুর্নামেন্ট শুরুর আগে সব কেন্দ্রের কিউরেটর দের কাছে পৌঁছে গেছে পিচ চরিত্র কেমন রাখতে হবে সেই গাইড লাইন।
আমরা সেই গাইডলাইন পাওয়ার চেষ্টা চালাই। পেয়েও যাই। এই বিশেষ প্রতিবেদনের শুরুতেই গ্রাফিক্সের মাধ্যমে সেই গাইডলাইন এর চারটি বিশেষ লাইন তুলে দিলাম।
কি বলা আছে সেখানে?
১. সমান গতিতে বল যাবে। বোলারের হাত থেকে বল বেরিয়ে উইকেটে পড়বে। তারপর ব্যাটসম্যানের কাছে যাবে। এই দুই পর্বের গতি যেন সমান হয়। এমনকি উইকেটকিপার যেন হাঁটুর নিচে না বলে ধরে। ( ইডেনে কেকেআরের প্রথম ম্যাচে এমনটাই দুই ইনিংসে দেখা গেছে)।
২. ম্যাচে দুটি পর্বে খেলা। ২০ ওভার করে প্রতি পর্ব। সব পর্বে ২২ গজের চরিত্র যেন এক থাকে। অর্থাৎ বাড়তি সুবিধা যেন কোনও অর্ধের দল না পায়।
৩. পেস বোলার যেন দুটি পর্বেই সমানভাবে বলের সিম মুভমেন্ট পায়। ( শার্দুল ঠাকুর যেমনটা করে দেখালেন)।
৪. সম্পূর্ন স্পিনিং উইকেট যেন না হয়। ( এই গাইডলাইন সুজন মেনে উইকেট বানিয়েছেন, সঙ্গী সাথীদের নিয়ে। কেকেআর ম্যানেজমেন্ট কি এই গাইডলাইন পড়েও দেখেনি! )
চেন্নাই নিয়ে কথা হচ্ছে। ভুলে গেলে চলবে না, চেন্নাই সুপার কিংস এর মালিক গোষ্ঠী ওই রাজ্যেরই। কলকাতা নাইট রাইডার্স আর মালিক গোষ্ঠী মুম্বইয়ের। কলকাতাতে ৩৬৫ দিন কোনও অফিস পর্যন্ত এই ১৮ বছরে বানানোর প্রয়োজন মনে করে নি। আর চেন্নাইয়ের মত চিপকের পিচ চরিত্র বুঝে প্লেয়ার অ্যাকশনে দল গড়ে নি কেকেআর। আইএসএল চ্যাম্পিয়ন এটিকে মোহনবাগানও দলের ক্যাপ্টেনকে ছেড়ে দেয়না। আর কেকেআর? নেতাকে ছাড়ে। তুখোড় ওপেনারকে ছাড়ে। দলে থেকে অন্য ব্যাটসম্যান দিল্লি দলে গিয়ে শেষ ওভারে ম্যাচ জেতায়।
২২ গজের পিচ নিয়ে অযথা বিতর্ক না বাড়িয়ে কেকেআর নিজেদের শক্তি সামর্থ অনুযায়ী খেলতে থাকুক। আর কলকাতার ফ্যানরা দলকে আরো বেশি করে অনুপ্রাণিত করুক। হোম গ্রাউন্ডের সমালোচনা না করে। ম্যাচ বুঝে টিকিটের দাম বাড়িয়ে বেশি মুনাফা তোলা তো রইলো। আর কি কি চাই ” মাই নেম ইজ খান” এর দলবলের? কলকাতা থেকে একটা ক্রিকেটারও এই দলের ম্যানেজমেন্ট দলে নেয় না। অন্য দলের হয়ে কয়েকজন তো খেলছে কোটি টাকার দামে। এক বাঙালি কিউরেটর গোটা দেশে কদর পান ( বাংলার প্রাক্তন রঞ্জি ক্রিকেটার, বাংলা ক্রিকেট সংস্থার যুগ্ম সচিব ছিলেন)। সেটাতেও বাংলার ক্রিকেটারদের একাংশের গাত্রদাহ!!