দীপঙ্কর গুহ ( এডিটর ইন চিফ) :
কলকাতা: আজব এক সংস্থা! কী ঔদ্ধত্য!! কী অসাবধানী!! নিজেরা যা মনে করবে, সেটাই চালিয়ে যাবে!! সিএবি চলে আপন মেজাজে। নমুনা অনেক। খোঁজ পেলে রোজ ৩-৪ টি এমন নানান কীর্তি সামনে আসবে। কেউ প্রতিবাদ করে না। পাছে বেহালার রাজা – মহারাজা’রা না চটে যান। নিজেরা বেহাল হয়ে যান।
প্রতিবাদ আমরা করি। এখন যেমন লিখতে যাচ্ছি। দ্বিতীয় ডিভিশন ক্লাব সুবার্বান এগিয়ে চলেছে মোক্ষ লাভের পথে। এবার এই দল নাকি শুরু থেকেই প্রথম ডিভিশনে ওঠার জন্য দল গড়েছে। ভালো। এই ডিভিশনের কোনও দল বাইরের রাজ্যের ক্রিকেটার খেলাতেই পারে না। তবুও খেলছে, গোটা ময়দান জানে। ক্লাব চায়। কোচ চায়। কিছু “দালাল” চায় ( যারা ভিন রাজ্যের ক্রিকেটারদের আনছে, আর আধার কার্ড জাল করে লোকাল ঠিকানা বসাচ্ছে)। চলে মোটা টাকার লেনদেন।
উপরের ছবিগুলি প্রসঙ্গে পরে আসছি। এটুকু বলে রাখি, সব অভিযোগ জানিয়ে একের পর এক চিঠি। আধার কার্ডটি এই সুবার্বান ক্লাবের এক ক্রিকেটারের। কার্ডে লেখা ঠিকানায়, এই নামে নাকি কেউ থাকে না। সিএবি সচিব, ওম্বুডসম্যানকে লেখা চিঠি। ময়দান থানায় অভিযোগ নেওয়া হয়েছে ক্লাবের ৬ জন ক্রিকেটারের বিপক্ষে।
সুবার্বানের জন্য এত দরদ কিসের!
এই সুবার্বান ক্লাব সিএবিকে ( পড়ুন বড় বাবুদের) হাতের তালুতে নিয়ে নিয়েছে! নক আউটের পর্যায়ের শুরু থেকে নিজেদের পছন্দ মতন মাঠ বদলে নিয়েছে। একবার নয়, দু – দুবার। খেলার দিন বদলে নিয়েছে, ক্রীড়াসূচি হয়ে যাওয়ার পরও। ভাবা যায়! ময়দানের বড় প্রধান দলরা ( ইস্ট বেঙ্গল/ মোহনবাগান/ কালীঘাট/ ভবানীপুর) যা করে নি।
তারচেয়েও আরও রংবাজি চালিয়ে যাচ্ছে এই ক্লাব – এমনই দাবি, সংস্থায় এক পক্ষের ক্লাব কর্তাদের। তাঁদের বক্তব্য জোরালো। নাম প্রকাশ করা যাবে না এই শর্তে বলেছেন: “এই ক্লাবের দল গড়ে দিয়েছে, এমন এক কর্তা যার ক্লাব বহু বছরের পুরনো। ঐতিহ্য অনেক। ক্রিকেট – ফুটবল, দুই ক্ষেত্রেই। সেই ক্লাবের কর্তা এখন ময়দানে ৩-৪ টি দল গড়ে দেন ভিন রাজ্যের ক্রিকেটারদের এখানে খেলাতে এনে। এখনকার বড় কর্তারা সব জানেন। এই সুবার্বান ক্লাবের দলও গড়েছেন এই কর্তাটি। এক বছর আগে পোর্ট ট্রাস্ট ক্লাব ( কেন্দ্রীয় সরকারের সংস্থা পোর্ট ট্রাস্ট) দ্বিতীয় ডিভিশনে নেমে যাওয়ার পর, এই একই কর্তাকে মোটা টাকায় দল গড়ে দেওয়ার কাজ দেয়। দল গড়ে দেয়। পোর্ট ট্রাস্ট সফল হয়।
এবার? সুবার্বান ক্লাবের ৬ জন ক্রিকেটারের নামে ( দাবি তারা অন্য রাজ্যের) এক ক্রিকেটপ্রেমী যাবতীয় তথ্য জোগাড় করে লালবাজার পর্যন্ত পৌঁছে যান। তিনি অভিযোগ করেছেন, এই ছয় ক্রিকেটার নিজেদের সঠিক ঠিকানা না দিয়ে, অন্য ঠিকানায় আধার কার্ড বানিয়ে খেলছে। ক্লাব তাদের স্থানীয় ক্রিকেটার বানিয়ে খেলাচ্ছে। সাফল্য আসছে। দল দ্বিতীয় ডিভিশন চ্যাম্পিয়নশিপের সেমি ফাইনালে পৌঁছে গেছে। আর দুটি ম্যাচে জয় মানেই, প্রথম ডিভিশনে খেলার ছাড়পত্র মিলে যাওয়া।
বিকিয়ে যাচ্ছে ক্লাব!
সেটা সঠিক পথে হলে বাংলার ক্রিকেটের পক্ষে খুব ভালো। কারণ, অধিকাংশ দ্বিতীয় ডিভিশনে খেলা দল – ক্লাবের দল গড়ার কাজ অন্য ফিনান্সারের কাছে বেচে দিয়ে টাকা নিচ্ছে। তা ৮-১০ লাখ ছাড়িয়ে যাচ্ছে। আবার ক্লাবের হয়ে বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রতিনিধিত্ব করতে চাইলে লাগছে, আরও বাড়তি ৬-৯ লাখ ( এটা ক্লাব বুঝে)।
Cricket : হতশ্রী বাংলার ক্লাব ক্রিকেট
এসব আজ সকলের জানা। সুবার্বান ক্লাবের যে যে ক্রিকেটারের দিকে আঙুল উঠেছে, তাদের মধ্যে দুই ক্রিকেটারকে এখনও খেলিয়ে যাচ্ছে ক্লাব। সিএবি জানে কি অভিযোগ। এমন কি এই ভিন রাজ্যের ক্রিকেটারদের এন্তার খেলা রুখতে বিশেষ সাধারণ সভা ডেকে আলোচনা করেছে। নয়া নিয়মে খসড়া করেছে। কিন্তু এখনই ক্লাবকে সতর্ক কেন করছে না? ময়দানে শোরগোল একটাই, আসছে সেপ্টেম্বর নির্বাচন! অর্থাৎ সিএবিতে লড়াই! পক্ষ – বিপক্ষের লড়াই। প্রয়াত জগমোহন ডালমিয়াত্তর পর্বে হয়তো এই প্রথমবার সরাসরি লড়াইয়ের মঞ্চ বাঁধার কাজে সলতে পাকানো চলছে। কি হবে, বোঝা যাবে আইপিএল ফাইনাল পর্ব মিটলে। কিন্তু শাসক গোষ্ঠী কি বুঝতে পারছে, সমঝোতা বা দল ভারী করতে গিয়ে কিভাবে তোষণ পর্বে তারা মত্ত? এই সুবার্বান ক্লাবের নেপথ্যে যে কর্তা তাঁকে কেন এত সুযোগ করে দেওয়া? কেন জেলায় জেলায় দৌড়? কেন একটি ক্রিকেট কোচিং সেন্টারের নিজস্ব টুর্নামেন্টের ফাইনালে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় চলে যাচ্ছেন! কেন ময়দানের একাধিক ক্লাবের বিশেষ সদস্যপদ নিয়ে নিচ্ছেন তিনি! কেন সিএবির একাধিক ক্লাবের সভাপতি পদে বসে পড়ছেন ( বা বসে আছেন) ! তিনি প্রাক্তন বোর্ড সভাপতি। লোধা আইন জানা। “কনফ্লিক্ট অফ ইন্টারেস্ট” নিয়ম ভালো মতন জানেন। তারপরও!!?
এই যে ক্লাব ক্রিকেট ঘিরে অসন্তোষ জমাট হচ্ছে, তা নিয়ে সামান্যতম চিন্তিত তিনি বা শাসকগোষ্ঠী? আজ অভিযোগ লালবাজার হয়ে ময়দান থানায় গেছে। কাল “পি আই এল” হয়ে আদালতে কড়া নাড়লে, খুব আনন্দে থাকবেন সকলে। জাতীয় ফুটবলের কে চ্যাম্পিয়ন, তা আটকে আছে আদালতে ইস্যুটি চলে যাওয়ায়। কলকাতা প্রিমিয়ার ডিভিশন ফুটবল চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা যাচ্ছে না। তাও আদালতে গিয়ে সব আটকে। সব জায়গায়, শাসক গোষ্ঠীর ব্যর্থতা বলে চ্যালেঞ্জ হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে, সিএবির কি হাল হবে? ভাবছেন কর্তারা? এখনও সময় আছে। পক্ষে বিপক্ষে কর্তারা বাংলার ক্রিকেটের স্বার্থটা আগে দেখুন। ব্যাক্তি স্বার্থ সরিয়ে রাখা যায় না?